প্রকাশিত: ২৪/০৯/২০১৯ ৯:৫৮ পিএম

২০২০ সালে মিয়ানমারে অনুষ্ঠেয় সাধারণ নির্বাচনের পর দেশটির রাষ্ট্রপতি হতে পারেন সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইয়াং। রাষ্ট্রপতি হওয়ার মনোবাসনা থেকে তিনি ইতিমধ্যেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে জনসংযোগ করেছেন।

মিয়ানমারে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী নির্মূলে অন্যতম প্রধান ভূমিকা রাখা এই সেনাপ্রধান বিশ্বজুড়ে সমালোচিত হলেও মিয়ানমারে তাকে কেউ অবমূল্যায়ন করবেন না। কারণ, দেশটির রাজনীতিতে রাজনীতিকদের জায়গা খুবই সীমিত। তারপরেও তিনি শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি হতে পারবেন কিনা তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে।

অনেক সমালোচক ও রাজনীতি বিশ্লেষক মনে করেন সেনাবাহিনীর সিনিয়র জেনারেল পদটি রক্ষা করাই সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইয়াং-এর প্রধান লক্ষ্য। অতীতে সংবাদমাধ্যমে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল তিনি দেশের শীর্ষপদে (রাষ্ট্রপতি) আসীন হতে চান কিনা। সেনাপ্রধান উত্তরে কখনও ‘না’ বলেননি।

দেশটির কমান্ডার-ইন-চিফ তিনিই। এখন তার বয়স ৬৩ বছর। ২০১৬ সালের জুলাই মাসে তার অবসর নেওয়ার কথা ছিল। মিয়ানমারে সরকারি কর্মচারীদের অবসরের বয়সসীমা ৬০ বছর।

অং সান সু চির ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) সরকার সেই সময় ভেবেছিল স্বেচ্ছায় অবসর নেবেন সেনাপ্রধান। কিন্তু সেই প্রত্যাশা দূরে ঠেলে সেনাপ্রধান তার পদের মেয়াদ বাড়িয়েছেন।

কমান্ডার-ইন-চিফের মেয়াদ বাড়াতে হলে মিয়ানমারের রাষ্ট্রপতির অনুমোদন দরকার পড়ে। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রথমদিকে অনুমোদন দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। এর ফলে সেনাপ্রধান ও এনএলডি সরকারের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল।

সম্প্রতি সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইয়াং-এর অনেকগুলো কাজ বেশ কৌতূহলের সৃষ্টি করেছে। মান্দালয় ও ইয়াঙ্গুনসহ কয়েকটি বড় শহরে খ্রিস্টান ও মুসলিম ধর্মীয় গোষ্ঠীর মানুষ ও তাদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেছেন এবং অনুদান দিয়েছেন সেনাপ্রধান।

জেনারেল মিন অং হ্লাইয়াং ২০১০ সালে সেনাপ্রধানের দায়িত্ব নেবার পর তার কার্যক্রম এবং সাম্প্রতিক পদক্ষেপ ভিন্নরকম। রাজনীতি বিশ্লেষকরা তার বিরুদ্ধে ধর্মীয় নিপীড়নের অভিযোগ করেছেন বিভিন্ন সময়ে। সেনাপ্রধানের সাম্প্রতিক জনসংযোগ লোক দেখানো রাজনৈতিক প্রচারণা বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।

২০১৭ সালে রোহিঙ্গা বিদ্রোহী দমনের নামে রাখাইন রাজ্যে হামলা চালানোর পরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কেউ কেউ মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা মুসলমানদের নিধনের অভিযোগ আনেন। এ অভিযানের বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) তার বিচারের জন্য অনেকে চাপ দিয়েছেন।

দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে থাকা জেনারেল মিন অং হ্লাইয়াং নিজেকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দেখতেই খুশি হবেন। তিনি যদি রাষ্ট্রপতি হতে পারেন তবে দেশে এবং দেশের বাইরে সমস্ত বিরোধীদের একটা জবাব দেওয়া হবে। আর একই সঙ্গে পূর্ণ হবে তার উচ্চাকাঙ্ক্ষা।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী আগের মতো সরাসরি ক্ষমতা দখল করতে চাইবে না। কিন্তু সেনাপ্রধান যদি গণতান্ত্রিক ধারায় রাষ্ট্রপতি হতে চান তবে তাকে সাংবিধানিকভাবে বাধ্যতামূলক নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হতে হবে।

সেনা সমর্থিত দল ইউএসডিপি এবং তার সহযোগী দলগুলি যদি সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় তবে রাষ্ট্রপতি হয়ে যেতে পারবেন মিন অং হ্লাইয়াং। তবে এটি অসম্ভব বলেই ধারণা করা হচ্ছে। মিয়ানমারের ইউনিয়ন সংহতি ও উন্নয়ন পার্টি (ইউএসডিপি) সাবেক সামরিক সরকার দ্বারা গঠিত একটি দল। এখনও দলটি সেনাবাহিনীর মূল মিত্র। তবে সংসদে তাদের আসন মাত্র ৬ শতাংশ। সু চির নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন এনএলডি ৫৯ শতাংশ আসন এবং ২৫ শতাংশ সেনা প্রতিনিধিদের হাতে রয়েছে। অন্যান্য দলগুলোর আসন ৯ শতাংশের বেশি।

রাষ্ট্রপতি হতে জেনারেল মিন অং হ্লাইয়াং-এর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা আবশ্যক নয়। দেশটিতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হতে হলে সরাসরি ভোট নয়, নিম্নকক্ষের নির্বাচিত সদস্য, উচ্চকক্ষের নির্বাচিত সদস্য এবং সামরিক বাহিনীর প্রতিনিধিদের সমর্থন প্রয়োজন পড়ে। জেনারেল মিন অং হ্লাইয়াং সেই সমর্থন কিভাবে সংগ্রহ করেন তাই এখন দেখার বিষয়।

পাঠকের মতামত

আন্তর্জাতিক সহায়তা বাড়ানোর পাশাপাশি রোহিঙ্গা সংকট সমাধান প্রয়োজন: ড. ইউনূস

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সহায়তা বাড়ানো এবং ন্যায়সঙ্গত উত্তরণের পথ নিশ্চিত করা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন ...

জাতিসংঘে প্রেসিডেন্ট পদে লড়বে বাংলাদেশ, প্রতিদ্বন্দ্বী ফিলিস্তিন

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮১তম অধিবেশনের প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে বাংলাদেশ। এবারের নির্বাচনে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ...

জাতিসংঘে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব বিপুল ভোটে পাস

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে হামাসমুক্ত স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি প্রস্তাব বিপুল ভোটে পাস হয়েছে। ...